1st Floor, 113/B, Tejgaon Industrial Area, Dhaka-1208

যাকাত দিলে সম্পদ পবিত্র হয় এবং বৃদ্ধি পায়!

 

ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যাকাত। যাকাত আদায় ও এর বণ্টন একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ বাধ্যতামূলক ইবাদাত, তেমনি তা সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর করে  ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কার্যকর একটি উপাদানও বটে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলমানদের জন্য যাকাত আদায় করা ফরজ বা অবশ্য পালনীয়কর্তব্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

“তোমরা সালাত কায়েম করো ও যাকাত আদায় করো এবং যারা রুকূ’করে তাদের সাথে রুকূ’করো।” (সূরা বাকারা হ আয়াত ৪৩)

পবিত্র কুরআনে আরো বলা হয়েছে,

“(হে রাসূল!), আপনি তাদের সম্পদ  থেকে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ করে তাদেরকে পূত-পবিত্র করুন এবং তাদের জন্যে (তাদের সম্পদে) প্রবৃদ্ধি ঘটান।” (সূরা তাওবা হ : ১০৩)

আল্লাহর পথে যারা ব্যয় করে তাদের সম্পদ আল্লাহ কিভাবে বৃদ্ধি করেন সে সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কুরআনে বলেছেন,

“যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” (সূরাহ আল বাকারাহ: আয়াত ২৬১)

যাকাত ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যারা যাকাত আদায় করে না তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন:

“যারা যাকাত আদায় করে না তারা শেষ বিচারের দিনে দেখতে পাবে যে, তাদের সেই সব ধন-সম্পদ ভয়ঙ্কর সাপ হয়ে তাদের দেহ জড়িয়ে ধরছে। এসব বিষাক্ত সাপ তাদের দেহকে কঠিন ভাবে নিষ্পেষিত করবে, ছোবল দেবে এবং বলতে থাকবে-আমরাই তো তোমাদের আহরিত ধন-সম্পদ এবং আমরাই হলাম সেই সব রত্ন সম্ভার, যার প্রতি তোমরা এত আসক্ত ছিলে।”(সহীহ আল বুখারী)

যাকাত যোগ্য ন্যূনতম সম্পদ (নিসাব)
নিসাব হলো ন্যূনতম সেই পরিমাণ সম্পদ, যা কোনো ব্যক্তির মালিকানায় এক চন্দ্র বছর পূর্ণ করার ফলে তাঁর উপর যাকাত ফরজ হয়। যাকাত প্রযোজ্য হয় এমন সম্পদ সমূহ হলোঃ নগদ টাকা, সোনা, রূপা, সব ধরনের বাণিজ্যিক পণ্য, গবাদি পশু ও নির্দিষ্ট কৃষিপণ্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় মৌলিকচাহিদা মেটানোর পর এক চন্দ্র বছরের জন্য কমপক্ষে ৮৫ গ্রাম সোনা বা ৫৯৫ গ্রাম রূপা অথবা এর কোনো একটির সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা অন্যান্য সম্পদ কোনো ব্যক্তির মালিকানায় থাকলে প্রতি যাকাত অর্থবছরে সংশ্লিষ্ট সম্পদ থেকে ২.৫% হারে যাকাত আদায় করা তাঁর উপর ফরজ।

কাদের মাঝে যাকাত বিতরণ করতে হবে
যাকাতের অর্থ পরিশোধের বিষয়ে কুরআন মাজীদে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াত অনুযায়ী যাদের মাঝে যাকাত বিতরণ করা যাবে তারা হলেন:

১. ফকীর: এরূপ গরীব মানুষ, যার বেঁচে থাকার মত খুব সামান্য সহায় সম্বল রয়েছে বা নেই।

২. মিসকীন: এমন অভাবী, যার রোজগার তার নিজের ও নির্ভরশীলদের অপরিহার্য প্রয়োজনসমূহ মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

৩. আমিলীন: প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ কাজে নিয়োজিত কমচারীবর্গ।

৪. মুয়াল্লাফাতিল কুলূব: এমন নও-মুসলিম যার ঈমান এখনও পরিপক্ক হয়নি; অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক এমন কোনো অমুসলিম, যাদের চিত্ত দ্বীন ইসলামের প্রতি আকর্ষিত ও উৎসাহিত করা আবশ্যক। এরূপ ব্যক্তিদের যাকাত প্রদান,করা যাবে, যাতে তারা ঈমান গ্রহণ করে এবং তাদের ঈমান পরিপক্ক হয়।

৫. রিকাব: ক্রীতদাসের দাসত্ব মোচনের জন্য মুক্তিপণ প্রদান।

৬. গারিমীন: ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের জন্য।

৭. ফী সাবীলিল্লাহ: আল্লাহর রাস্তায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, যারা ইসলামের প্রচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত; এবং

৮. ইবনুস-সাবীল: মুসাফিরের পাথেয়, অর্থাৎ-অর্থাভাবে বিদেশ-বিভূঁইয়ে আটকে-থাকা মুসাফির।

যাদেরকে যাকাত দেওয়া যায় না

  • নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিককে: যে ব্যক্তি অন্যূন ৮৫ গ্রাম সোনাবা ৫৯৫ গ্রাম রূপার অথবা সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা সমমূল্যের অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী বা বাণিজ্য পণ্যের মালিক, তাকে যাকাত প্রদান করা যায় না। এরূপ ব্যক্তির যাকাত গ্রহণ নিষিদ্ধ এবং তা ব্যবহার করা হারাম। নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী কাউকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না, বরং যাকাত আদায়কারীকে পুনরায় যাকাত দিতে হবে।
  • নির্দিষ্ট আত্নীয়কে: ব্যক্তি তার আপন মাতা, পিতা, মাতামহ, মাতামহী, পিতামহ ও পিতামহী এবং তাদের পিতা-মাতাকে যাকাত দিতে পারবে না। তেমনিভাবে নিজের পুত্র, কন্যা, দৌহিত্র ও দৌহিত্রীগণ এবং তাদের সন্তানাদিকেও যাকাত দেওয়া যায় না। আবার স্বামী স্ত্রীকে যাকাত দিতে পারবেন না। উক্তরূপ পরিজনবর্গ ছাড়া অন্যান্য আত্নীয়-স্বজন, যথাঃ ভাই-বোন, চাচা-চাচী, মামা-মামী, ফুফা-ফুফু, খালা-খালু, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী, চাচাতো-মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোন, ভ্রাতুষ্পুুত্র-ভ্রাতুষ্পুত্রী প্রমুখকে যাকাত প্রদান করা যায়। এমনকি স্ত্রী তার স্বামীকেও যাকাত দিতে পারবেন।
  • সেবার প্রতিদানে: কোনো ব্যক্তিকে তার কৃত সেবার জন্য প্রতিদান স্বরূপ যাকাত প্রদান করা যায় না। তেমনিভাবে শিক্ষক বা সম্পত্তি তত্ত্বাবধানকারীগণকেও যাকাত দেওয়া যায় না।কর্মচারীকে মজুরি হিসেবে: গৃহভৃত্য বা অন্য কোনো কর্মচারীকে মজুরি হিসেবে যাকাত দেওয়া যায় না। অবশ্য মজুরির অতিরিক্ত উপহার হিসেবে, এবং কোনো বিনিময় বা কৃতজ্ঞতাবোধের প্রত্যাশা ব্যতিরেকে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যায়।
  • মসজিদে: কোনো মসজিদের নির্মাণ, মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে যাকাত পরিশোধ করা যায় না।
  • দাফন-কাফনের ব্যয় নির্বাহে: কোনো মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশ্যে যাকাত ব্যবহার করা যায় না। তবে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা গরীব হয়ে থাকলে যাকাত গ্রহণ করতে পারবেন এবং সেই টাকা থেকে তাদের মৃত আত্নীয়ের দাফন-কাফনের জন্য খরচ করতে পারবেন।

বিবিধ বিষয়

  • কোনো ব্যক্তিকে প্রদত্ত যাকাত তার অন্তত এক দিনের প্রয়োজন মেটানোর মতো পরিমাণের চেয়ে কম হতে পারবে না। তাছাড়া যাকাত এমনভাবে দেয়া উচিৎ, যাতে যাকাত গ্রহিতা যাকাতের অর্থ দিয়ে স্থায়ীভাবে দারিদ্রমুক্ত জীবন যাপন করতে পারে।
  • যদি কেউ কাউকে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত বিবেচনায় যাকাত দেয়, কিন্তু পরে দেখা গেল, যাকাত গ্রহিতা নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী অথবা যাকাত দাতার সাথে যাকাতগ্রহিতার বিশেষ আত্নীয়তা রয়েছে (যাদের যাকাত দেয়া নিষিদ্ধ), এরূপ ক্ষেত্রে যাকাতদাতার যাকাত আদায় হয়ে যাবে, তাঁকে পুনরায় যাকাত আদায় করতে হবে না।
  • কোনো ব্যক্তি যদি যাকাত গ্রহণের জন্য উপযুক্ত না হন, তাহলে তাকে যাকাত দেয়া হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করবেন অথবা তৎক্ষণাৎ তা যাকাতদাতার নিকট ফেরত দেবেন। কারণ, তার জন্য যাকাত গ্রহণ নিষিদ্ধ।
  • যাকাত-এর প্রথম হকদার হলেন গরীব আত্নীয়-স্বজন। তারপর অগ্রাধিকার পাবেন যাকাতদাতার প্রতিবেশীগণ; অতপর, তার বসবাসের গ্রাম/শহর/নগর বা দেশের উপর্যুক্ত রূপের অধিবাসীগণ। অন্য এলাকার লোকদের প্রয়োজন অধিকতর তীব্র ও জরুরী হলে তাদের কাছেও যাকাত প্রেরণ করা যায়।

যাকাতের হিসাব

যাকাতের হিসাব করা খুব কঠিন কিছু নয়।  আমাদের যাকাত ক্যালকুলেশন ফর্ম ব্যবহার করে  আপনি নিজেই  আপনার যাকাত হিসাব করতে পারবেন। এই লিংকে গিয়ে আমাদের যাকাত ক্যালকুলেশন ফর্মটি ডাউনলোড করে নিতে পারেনঃ

https://czm-bd.org/wp-content/uploads/2019/02/Zakat-Calculation-Form.pdf

অথবা এই এক্সেল ফাইলটি ব্যবহার করতে পারেনঃ

https://czm-bd.org/czm-zakat-calculator/

স্বর্ণ বা রুপার দাম আপনার নিকটস্থ জুয়েলারী দোকান থেকে জেনে নিতে পারেন অথবা বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে পারেন: http://www.bajus.org/index.php?action=goldpriceview

যাকাতের বিধিবিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই বইটি পড়তে পারেনঃ

https://czm-bd.org/wp-content/uploads/2019/05/Zakater-Bidhibidhan_E-book_2019.pdf