[email protected]
+880 288 70 770

1st Floor, 113/B, Tejgaon Industrial Area, Dhaka-1208

Donate Now
19Mar

"নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যাকাত" প্রতিপাদ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ১৩তম যাকাত ফেয়ার ২০২৫

১ লাখ কোটি টাকা ১ কোটি ৮৭ লাখ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষদের মাঝে বণ্টন করা সম্ভব হলে জনপ্রতি ৫৩ হাজার ৪শ'৭৫ টাকা করে পাবে যা একটি মানুষের সারা বছরব্যাপী খাদ্য যোগানোর জন্য যথেষ্ট।


বাংলাদেশে প্রতিদিন ১৩ শতাংশ মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়, অথচ এখানে ২০১৮ সালের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী যাকাতের সম্ভাব্য তহবিল ছিল প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা যা বর্তমানে আরো বেশি হবার কথা। যদি এই বিপুল পরিমাণ যাকাত সঠিক ব্যবস্থাপনায় সংগ্রহ ও বিতরণ করা যায়, তবে তা দারিদ্র্য বিমোচন ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) গত ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডে অবস্থিত আলোকি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজন করে ত্রয়োদশ যাকাত ফেয়ার-২০২৫। দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল— "নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যাকাত"। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

ফেয়ারের প্রথম দিনে মেলার মূল আকর্ষণ ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি। সকাল ১১টায় ভেন্যুর গ্র‍্যান্ড বলরুমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব শেখ বশির উদ্দীন, বিশেষ সম্মানিত অতিথি ছিলেন ওয়ার্ল্ড যাকাত অ্যান্ড ওয়াকফ ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল দাতুক ড. মোহাম্মদ গাজালী নূর, প্রধান অতিথি ছিলেন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। 

এতে “Role of Islamic Social Finance in Economic Empowerment and Human Development” শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন যুক্তরাজ্যের ম্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটির মাইক্রোইকোনোমিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক। তিনি তার প্রবন্ধে তুলে ধরেন যে, ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার যাকাতের সম্ভাবনা ছিল, বর্তমানে তা আরো বেড়ে যাওয়ার কথা। এই যাকাত যথাযথভাবে আদায় ও ব্যবস্থাপনা করা গেলে বাংলাদেশে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ সম্ভব ও দারিদ্র‍্য বিমোচন অনেকাংশেই বাস্তবায়িত হবে। তার প্রবন্ধে তিনি সিজেডএম-এর যাকাত ব্যবস্থাপনাকে একটি অনুকরণীয় মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি ওয়াকফের গুরুত্বও তুলে ধরেন। 

শেখ বশির উদ্দীন জানান, নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যাকাত আদায় শুরুর পর থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক বারাকাহ আসতে শুরু করে। তিনি বলেন, যাকাত ও সাদাকা মূলত মানুষের অন্তরকে কার্পণ্যমুক্ত করে আরো বেশী দানশীলতার প্রতি ঝুঁকিয়ে দেয়।

"আমার প্রতিষ্ঠান যাকাত-কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠান। এর বিনিময়ে আমি এইটুকু বলতে পারি, সবচেয়ে বড় যা পেয়েছি, তা হলো বরকত।" -- বানিজ্যিক উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন

ড. গাজালী ওয়াকফ ব্যবস্থার পুনরুদ্ধারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এই অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন সোশাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজীদ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক ও সিজেডএম-এর শরীয়াহ সুপারভাইজরি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. মোখতার আহমাদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিজেডএম-এর সিইও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সিজেডএম-এর চেয়ারম্যান নিয়াজ রহীম। 

অনুষ্ঠানের শেষে বিপুল সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে স্টেজের সিজেডএম-এর ক্রাউডফান্ডিং অ্যাপ “সিজেডএম যাকাত” লঞ্চ করা হয় এবং এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্রদর্শণীও হয়।

এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি যাকাত ফেয়ার উপলক্ষ্যে আয়োজিত ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির এক সংবাদ সম্মেলনে সিজেডএম-এর আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টে (সিজেডএম)-এর উদ্যোগে ত্রয়োদশ যাকাত ফেয়ার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানান এবং বলেন, দেশে প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যায়। যদি এক লাখ কোটি টাকা যাকাত সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে বাংলাদেশে কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না। ১ লাখ কোটি টাকা ১ কোটি ৮৭ লাখ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষদের মাঝে বণ্টন করা সম্ভব হলে জনপ্রতি ৫৩ হাজার ৪শ'৭৫ টাকা করে পাবে যা একটি মানুষের সারা বছরব্যাপী খাদ্য যোগানোর জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশে সিজেডএম-এর ব্যবস্থাপনায় ১০০০ কোটি টাকার যাকাত বিতরণ করলে ৫৩ লাখ মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব।


জিনিয়াস বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সক্ষমতা উন্নয়ন সেশন

ভেন্যুর গ্র‍্যান্ড বলরুমে সকাল ৯টা থেকে অনুষ্ঠিত হয় জিনিয়াস বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সক্ষমতা উন্নয়ন সেশন । এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিজেডএম-এর সিইও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। সিজেডএম-এর শরীয়াহ অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ড. মোখতার আহমাদ তাদের সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন ।

পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান

মেলা উপলক্ষ্যে সিজেডএম পরিচালিত স্কুলগুলোর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার দেয়া হয় মেলার প্রথম দিনের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে, সকাল ৯টায় ভেন্যুর গ্রীনরুমে । যাকাত ফেয়ারের এবারের বিশেষ আয়োজন ছিল যাকাত বিষয়ক বইপড়া প্রতিযোগিতা । এখানে সারা দেশ থেকে নিবন্ধনকৃতদের মধ্য থেকে ১৫,০০০ প্রতিযোগী অনলাইন কুইয-এ অংশ নেয় এবং ফেয়ারের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ২০০ জন বিজয়ীর মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় কেবিনেট সেক্রেটারি ড. আব্দুর রশীদ এবং অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন রহীম আফরোজ গ্রুপের গ্রুপ ডিরেক্টর মুনাওয়ার মিসবাহ মঈন । অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সিজেডএম-এর চেয়ারম্যান নিয়াজ রহীম। 

নারীদের জন্য সেমিনার ও প্রশ্নোত্তর পর্ব

একই দিনে দ্বিতীয় সেশনে দুপুর ২:৩০ থেকে গ্র‍্যান্ড বলরুমে “নারীদের জীবনে যাকাত, সাদাক্বাহ ও ওয়াকফ চর্চার গুরুত্ব ও তাৎপর্য” শীর্ষক সেমিনার ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয় যেখানে উপস্থিত ছিলেন কয়েকশ’ নারী দর্শক-শ্রোতা। 

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বীমা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাসিনা শেখ। তিনি যাকাত, সাদাক্বাহ ও ওয়াকফ বাস্তবায়নে ইসলামে নারীদের অবস্থান, ইতিহাস, সমকালীন চিত্র, সম্ভাবনা ও ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।

এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলোড়ন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও গার্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সাবেক প্রিন্সিপাল মিস সেলিন ইয়াসমীন, ইন্টারন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি দ্য গাম্বিয়ার রিসার্চ ও পাবলিকেশন বিভাগের ডিরেক্টর অধ্যাপক ড. আফরোজা বুলবুল ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মিস মারদিয়া মমতাজ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শক্তি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. সৈয়দা রাজিয়া সুলতানা ও বিশেষ অতিথি ছিলেন দাতিন নারিমাহ ফাদজিয়া আব্দুল্লাহ। এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিজেডএম-এর অডিট কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দা ফারজানা রহীম। 

প্রশ্নোত্তর পর্বে সিজেডএম-এর সিইও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়ার সঞ্চালনায় উপস্থিত দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অধ্যাপক ড. মোখতার আহমাদ। অনুষ্ঠান শেষে আলোচক ও দর্শক-শ্রোতাদের কৌতুহল ও প্রতিক্রিয়া ছিল অনুপ্রেরণাদায়ক। 

যাকাত ক্যালকুলেশন ওয়ার্কশপ

মেলার আরেক অন্যতম আকর্ষণ ছিল যাকাত ক্যালকুলেশন ওয়ার্কশপ। প্রথমদিনে দুপুর ২:৩০ থেকে গ্রীনরুমে আয়োজিত এই প্রোগ্রামে বিপুল সংখ্যক অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। এখানে যাকাতের মৌলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন  অধ্যাপক ড. মোখতার আহমাদ। ব্যক্তিগত যাকাত ক্যালকুলেশনের ওপর উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. যুবায়ের মোহাম্মদ এহসানুল হক এবং বিজনেস ও কর্পোরেট যাকাতের ওপর আলোকপাত করেন খাদিম সিরামিক্সের সাবেক সিএফও আমিনুর রহমান এফসিএ। 

এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিজনেস ও কর্পোরেট হাউজের সিএফও, বিজনেস, অ্যাকাউন্টিং ও ফিন্যানশিয়াল প্রফেশনাল এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা।

 

সিজেডএম-এর উপর প্রেজেন্টেশন

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এর সন্ধ্যায় লেকশোর হাইটসে ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট জনদের নিয়ে সিজেডএম-এর উপর একটি প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। আরো ছিলেন দাতুক ড. গাজালী নূর, সিজেডএম-এর গভর্নিং বোর্ড, অ্যাডভাইজরি বোর্ড ও শরীয়াহ বোর্ডের সদস্যবৃন্দ, সিজেডএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। 

ইমাম ও খতীবদের জন্য সেমিনার

ফেয়ারের দ্বিতীয় দিনে ছিল সকাল ১০টা থে গ্র‍্যান্ড বলরুমে ছিল ইমাম ও খতীবদের জন্য সেমিনার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন  সিজেডএম-এর সিইও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। প্রধান অতিথি ও সভাপতি ছিলেন যথাক্রমে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম খালিদ হোসেন ও ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. মোঃ শামসুল আলম। শুরুতেই ছিল যাকাত কিভাবে জীবনে পরিবর্তন এনেছে-এর ওপর কয়েকজন মুস্তাহিকের জীবনের ওপর ভিডিও প্রদর্শনী। এর পরে ইমাম অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন সন্তানপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মুফতী মুফতী কামরুজ্জামান মাহমুদী। 

সারা দেশ থেকে আগত শ'খানেক ইমাম ও  খতীবদের উপস্থিতিতে “যাকাত ব্যবস্থাপনায় ইমামদের ভূমিকা ও করণীয়” শীর্ষক এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের অধ্যাপক ড. আ. ক. ম. আবদুল কাদের। তিনি ইসলামী সমাজে মসজিদের গুরুত্ব, ইমামদের স্ট্যাটাস ও নেতৃত্বের ধরণ এবং ইবাদত হিসেবে যাকাতের অবস্থান ও ইতিহাস ব্যাখ্যা করেন। এরপর তিনি ইমামদের ৮টি সম্ভাব্য ভূমিকা তুলে ধরেন যেখানে তিনি বলেন যে, মসজিদভিত্তিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলিতে ইমামরা স্বতন্ত্র ব্যক্তি ও মজলিশকেন্দ্রিক কি কি কাজ ও আলোচনা পেশ করতে পারেন যাকাত ও এর সঠিক ব্যবস্থাপনার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। 

এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মানজুর-এ-এলাহী, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কাজী আবু হুরায়রা, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার রেক্টর মুফতী ওবায়দুল্লাহ হামজাহ, হজ্জ্ব ফিন্যান্স কোম্পানীর শারীয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যন মো. ফরিদুদ্দীন আহমেদ ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের যাকাত বোর্ডের ড. মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ। 

আগত অতিথিদের স্বত:স্ফূর্ত ও উৎসাহী অংশগ্রহণে পুরো মেলাটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল এভাবে, যেন এটি তাদেরই মেলা। এই প্রাণবন্ততা আগত অন্যান্য অতিথিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পিড়তে দেখা গিয়েছিল।

ওয়াকফ-বিষয়ক সেমিনার

দ্বিতীয় দিনে সকাল ১০টা থেকে ভেন্যুর গ্রীনরুমে অনুষ্ঠিত হয় “Challenges and Opportunities for Revival of Waqf in Bangladesh” শীর্ষক সেমিনার। অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী ও সভাপতিত্ব করেন সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিস্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। 

ওয়াকফ নিয়ে তার বিশদ গবেষণাপত্রে তিনি দেখান যে, স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মত এই বিষয়ক জরীপ সম্পন্ন হয় ১৯৮৬ সালে যখন ১,৫০,৫৯৩টি ওয়াকফ সম্পত্তি রেকর্ড করা হয় যেসবের মধ্যে ১,২৩,০০৬ টি মসজিদ, ৮,০০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ১,১৯,২৬৫ একর জমি ছিল ওয়াকফ-সম্পত্তি। এতে দেখা যায় কুমিল্লা জেলায় ওয়াকফ সম্পত্তির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, আর বান্দরবনে সবচেয়ে কম। বিভাগ হিসেবে এদিকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল রাজশাহী। আয় ও ব্যয়ের দিক থেকে প্রথম ছিল চট্টগ্রাম বিভাগ। ওয়াকফের শ্রেণীবিভাগ ও ইতিহাসের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের ওয়াকফ ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা, দূর্নীতি, অবৈধ দখলদারিত্ব, সম্পদের অপব্যবহার সহ বিভিন্ন দিক, সেসবের প্রতিকার ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার চিত্রটি তুলে ধরেন। এখানে তিনি সিজেডএম-এর ওয়াকফ ব্যবস্থাপনাকে একটি স্বচ্ছতামূলক মডেল হিসেবে উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা করেন।  

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সরকারের ওয়াকফ প্রশাসনের প্রশাসক মো. ফখরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. যুবায়ের মোহাম্মদ এহসানুল হক ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব হাফিজুর রহমান ভুঁইয়া। 

অনুষ্ঠানের শেষের দিকে ছিল উপস্থিত বিদগ্ধ অতিথিদের জন্য ওপেন ফোরাম। এ সময় তারা অনেকেই ওয়াকফ সম্পর্কে তাদের মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেন। অত্যন্ত জ্ঞান ও তথ্যবহুল এই অনুষ্ঠানটিতে প্রায় শ'খানেক আমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন পেশার বিশেষজ্ঞরাও।

ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন সেমিনার

দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ছিল বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব জনাব আরাস্তু খানের সঞ্চালনায় তরুন প্রজন্মের জন্য “Career Planning and Potential of Entrepreneurship” শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠান। এই সেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিজেডএম-এর সিইও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া । প্যানেল আলোচকদের মধ্যে ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের চীফ পিপলস অফিসার আরিফ শাহরিয়ার, শান্তা হোল্ডিংস লিমিটেডের সিএসআর অ্যান্ড সাস্টেইনেবিলিটির সিইও মো. জাহিদ হাসান, নিউ ভিশন গ্রুপের ডিরেক্টর জুনায়েদ মাসরুর খান, আইসিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুজিবুর রহমান ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মাসুদুর রহমান। এখানেও ছিল শ'খানেক উপস্থিতি। অনুষ্ঠানশেষে তাদের উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া ছিল সত্যিই আনন্দের। 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সবশেষে ছিল প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী আকর্ষনীয় সাংস্কৃতিক আয়োজন। ক্বুরআন তেলাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। পরিবেশিত হয় বেশ কয়েকটি হামদ, নাত, ইসলামী সংগীত, দেশাত্মবোধক গান, প্যারোডী গান ও নাটিকা। প্রাণবন্ত এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দর্শক উপস্থিতির সংখ্যা ছিল এক শতাধিক। সবশেষে ছিল সিজেডএম-এর ফটোসেশন।

মেলা উপলক্ষ্যে স্টল

মেলা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন স্টলগুলোতে নিজ নিজ পণ্য ও সেবাসংক্রান্ত কর্মসূচি। প্রকাশনা সংস্থাগুলো থেকে ছিল গার্ডিয়ান পাবলিকেশন, সীয়ান (SEAN) পাবলিকেশন, বিআইআইটি পাবলিকেশন, সমকালীন প্রকাশন, দারুল হিকমাহ পাবলিকেশন ও বিন্দু প্রকাশের বইয়ের স্টল। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইডিএলসি (IDLC) ইসলামিক, এনসিসি  ব্যাংক ও হজ্জ ফিন্যান্স কোম্পানী লিমিটেড। এনজিওগুলোর মধ্যে ছিল সাওয়াব (SAWAB), মাস্তুল ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইসলামিক ল রিসার্চ অ্যান্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার, এবং হেল্প ফর ডিপ্রাইভ ফাউন্ডেশন। এছাড়া ছিল হামদর্দ ও পিসেস কর্পোরেশন (Pieces Corporation)-এর পন্যসামগ্রীর স্টল। ছিল যাকাত ক্যালকুলেশন হেল্প ডেস্ক, সিজেডএম-এর অ্যালামনাই স্টল এবং  সিজেডএম-এর যাকাতগ্রহীতা ও নৈপুন্যবিকাশ প্রোগ্রামে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের হাতে বানানো বিভিন্ন গহণা ও পন্যসামগ্রী।

সাথে ছিল ভেন্যুর সামনের বিশাল চত্বরে ছিল ফটো গ্যালারির আয়োজন। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলা এই ফেয়ার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল।  দর্শক ও অংশগ্রহণকারীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত, যা প্রমাণ করে যে, মানুষের যাকাত ও ইসলামী সামাজিক অর্থনীতি নিয়ে আছে বিপুল আগ্রহ। সিজেডএম বিশ্বাস করে, এরকম মেলার আয়োজন বাংলাদেশের মানুষকে এ বিষয়ে ক্রমান্বয়ে সচেতন ও দায়িত্বশীল করে তুলবে, এবং দারিদ্র্য বিমোচন ও মানব-উন্নয়নের মাধ্যমে একদিন বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর একটিতে পরিণত করবে, ইনশাআল্লাহ!

 


Content section image