[email protected]
+880 288 70 770

1st Floor, 113/B, Tejgaon Industrial Area, Dhaka-1208

Donate Now
19Mar

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে জাকাতের ভূমিকা

রেয়াত অর্থে কর অব্যাহতি দেয়া হলে আয়কর নথিতে আয়ব্যয় প্রদর্শন স্বব্যাখ্যাত ও স্বচ্ছ হবে, এ ছাড়ের বিপরীতে জাকাতের অর্থ যথাযথ বিলি বণ্টনে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের বরাদ্দ ব্যয়ে বড় ধরনের সাশ্রয় ঘটবে।


সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী এমন একটি নিরাপদ বেড়াজাল যার মাধ্যমে সমাজের অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়। এটি বিভিন্ন কর্মসূচি এবং আইনগত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজের মানুষের মধ্যে পরস্পর সহাবস্থান এবং সম্প্রীতির একটি সুষম পরিবেশ তৈরি করে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক ও সামাজিক দুর্যোগে মানুষের মধ্যে সংঘটিত অনাকাক্সিক্ষত অবস্থা, মনুষ্য সৃষ্ট বৈষম্যগত দারিদ্র্য বিমোচন, বিভিন্ন আইনি সহায়তা এবং অসুস্থতা, বেকারত্ব, শিল্পদুর্ঘটনা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সহায়তা করা।

সামাজিক নিরাপত্তা আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের সামাজিক নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদিও এর প্রেক্ষাপট অতি পুরনো। সামাজিক নিরাপত্তা আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার অপরিহার্য কার্যক্রম হলেও প্রাচীনকালেও এর প্রচলন ছিল। বর্তমানের ন্যায় এ কর্মসূচি সুসংগঠিত না হলেও দানশীলতা, মানবতাবোধ ও ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সরকারি ও বেসরকারিভাবে এ কর্মসূচি গ্রহণের উদ্যোগ দেখা যায়। প্রাচীন মিসর, গ্রিস, রোম, চীন, ভারতে এর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত হজরত মুহাম্মদ সা: ৬২২ সালে স্বাধীনতা, সাম্য ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে যে কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন খোলাফায়ে রাশেদীনের সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা তার সুপথ প্রদর্শিত হয়ে দীর্ঘদিন মানবকল্যাণে ভূমিকা রেখে চলেছে।

ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বিশ্বমানবতায় চরম এক অভিশাপ। ধনী ও দরিদ্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে ইসলাম তাই কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আর্থিক মানবিক ও সামাজিক সাহায্যের বিধান রেখেছে। সম্পদ যেন শুধু বিত্তবানদের মধ্যে পুঞ্জীভূত না থাকে, সেজন্য এতে দরিদ্রের একটা নির্দিষ্ট প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করে দেয়া হয়েছে। একটি সুখী, সুন্দর ও উন্নত সামাজিক পরিবেশ গঠনে ধনাঢ্য মুসলমানদের অবশ্যই তাদের ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের একটি নির্ধারিত অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের দুর্দশা মোচনে ব্যয় করার বিধান রয়েছে। যার ফলে শুধু অসহায় ও দুস্থ মানবতার কল্যাণ হবে না; বরং সমাজে আয়বণ্টনেও বৈষম্য হ্রাস পাবে। বস্তুত সমাজে ধনসম্পদের আবর্তন ও বিস্তার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের মহান উদ্দেশ্যে জাকাতব্যবস্থার প্রবর্তন। পবিত্র কুরআনে ধনসম্পদ বণ্টনের মূলনীতি সম্পর্কে ঘোষণা, ‘যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান, কেবল তাদের মধ্যে ঐশ্বর্য আবর্তন না করে।’

ধনীরা তাদের ধনসম্পদের ৪০ ভাগের এক অংশ (১০০ টাকা আয়ের মধ্যে আড়াই টাকার প্রাপক) অসহায় দরিদ্রদের মধ্যে জাকাত বিতরণ করলে গরিবরা দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর কশাঘাত থেকে মুক্তি পায়। ইসলামী বিধান অনুসারে জাকাত প্রদানে সমাজের ঋণগ্রস্ত গরিব-দুঃখী, অনাথ, বিধবা, বৃদ্ধ, রুগ্ন, পঙ্গু ও অক্ষম ব্যক্তিরা মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে অভাব মোচন করতে পারে। জাকাতের অর্থ অভাবী মানুষের হাতে কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বণ্টিত হয়ে তাদের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হয়। ধনীরা যদি ঠিকমতো জাকাত আদায় করে, তাহলে সমাজে কোনো অন্নহীন, বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন, শিক্ষাহীন দরিদ্র থাকতে পারে না। জাকাতের সুষ্ঠু উশুল ও সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সমাজের দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব। যেমন পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘তাদের ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক।’

জাকাত আরবি পরিভাষা। এর অর্থ পবিত্রতা, প্রাচুর্যতা, ক্রমবৃদ্ধি এবং প্রশংসা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় জাকাত হচ্ছে সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ কোনো অসহায় মুসলমানকে দুনিয়াবি স্বার্থ (অর্থাৎ মুনাফা ও আসল ফেরতযোগ্য নয়, পূর্ণ মালিকানা প্রদান) ছাড়া প্রদান করা। জাকাত হচ্ছে অসহায়, অভাবী, অক্ষম এবং সুবিধাবঞ্চিত মুসলিম জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের একটি মানবিক সমাজ গড়ার হাতিয়ার। প্রকৃত পক্ষে মানবকল্যাণ জাকাতের মূলমন্ত্র। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে একজন মানুষের সম্পদ পবিত্রতা অর্জন করে, আর সেই জাকাতের অর্থ দিয়ে বঞ্চিত মানুষের সমস্যা সমাধান হয়। জাকাত হচ্ছে ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার, যা আদায় করতে ধনী ব্যক্তি বাধ্য। এর কোনো অন্যথা হলে তার ঈমান বিনষ্ট হবে। জাকাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম ফরজ আর্থিক ইবাদত।

জাকাত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থা। ইসলামী শরিয়তে জাকাত কার্যক্রমকে সে কারণে অন্যান্য আহকামের ওপর অগ্র্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জাকাত হতদরিদ্র, অভাবী ও অক্ষম জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করে। আল কুরআনে সালাত বা নামাজ কায়েমের নির্দেশের পরপর প্রায় ক্ষেত্রে জাকাত আদায়ের কথা এসেছে। পবিত্র কুরআনের ১৬টি স্থানে এটি সাদাকাহ শব্দে ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যদিকে ভূমির উৎপাদিত ফল-ফসলের জাকাতকে উশর নামে আখ্যা দেয়া হয়েছে। গচ্ছিত অর্থ, সোনা-রুপা, ব্যবসায়িক পণ্য, গৃহপালিত পশু, খনিজ সম্পদ এবং জমিতে উৎপাদিত ফসলের ওপর জাকাত আদায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ধর্মীয়, নৈতিক ও নানাবিধ ইতিবাচক উদ্দেশ্য থাকলেও অর্থনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আল-কুরআনের ৩২টি স্থানে সরাসরি জাকাত প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হজরত আবু বকর রা: জাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের পর্যুদস্ত করেছিলেন। সেই সাথে জাকাতদানে বাধ্য করেছিলেন।

নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ বা সঞ্চয় থাকলে জাকাত আদায় আবশ্যক। কিন্তু জাকাতের প্রাপক কারা এবং কিভাবে তা বণ্টিত হবে এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের অবকাশ রয়েছে। জাকাত বণ্টনের খাতগুলো সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সাদকা বা জাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত, জাকাত আদায়কারী কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্ত ব্যক্তিদের, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য; এটা আল্লাহর বিধান।’ (সূরা আত তাওবা : ৬০) দরিদ্র আত্মীয়স্বজন, দুস্থজন সাধারণত জাকাতের দাবিদার। আল্লাহ্ আল কুরআনে জাকাতের প্রাপক হিসেবে আরেক বিশেষ শ্রেণীর দাবিদারের কথা বলেছেন। ‘ইহা প্রাপ্য অভাবগ্রস্ত লোকদের, যারা আল্লার পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে দেশময় ঘোরাফেরা করতে পারে না; যাচ্ঞা না করায় অজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবমুক্ত বলে মনে করে, তুমি তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে যাচ্ঞা করে না। যে ধনসম্পদ তোমরা ব্যয় করো আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।’ (সূরা বাকারা : ২৭৩ )

সামাজিক নিরাপত্তা বিধান তথা মানবিক সেবা প্রদানের প্রথা হিসেবে রাসূল সা:-এর পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলদের সময়েও জাকাত আদায়ের নির্দেশ ছিল। তবে বিভিন্ন শরিয়তে এর আকার আকৃতি ও খুঁটিনাটি বিষয়াদি ছিল বিভিন্নরূপ। জাকাতের মূল উদ্দেশ্য হলো, জাকাত গ্রহীতাকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলার মাধ্যমে গ্রহীতার পর্যায় থেকে দাতার পর্যায়ে নিয়ে আসা। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে জাকাতদানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন তো হচ্ছেই না; বরং দরিদ্র শ্রেণীকে ভিক্ষুকে পরিণত করা হচ্ছে। কেননা জাকাতপ্রার্থীকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে জাকাতের কাপড় কিংবা পয়সা সংগ্রহে। এটা ক্রমশ ভিক্ষুকের মতো হাতপাতার অভ্যাস তৈরিতে সাহায্য করছে। তা ছাড়া জাকাত যে সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি, তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে না।

বেশ কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার পরিমাণ আদায় ও বিতরণযোগ্য জাকাত রয়েছে। যদি বিধিবদ্ধ উদ্যোগে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জাকাত সংগ্রহ এবং পরিকল্পনা মাফিক তা বণ্টনের ব্যবস্থা করা হতো; তাহলে দেশের দারিদ্র্য অনেকাংশে হ্রাস পেত। জাতীয় বাজেটে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ সংকুলান হয়েও উদ্বৃত্ত থাকত। তাই রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে প্রেরণা ও প্রযতে্ন জাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনের ব্যবস্থা চালু করার পথে অগ্রসর হওয়ার যৌক্তিকতা জোরালো হচ্ছে দিন দিন। বিশ্বের প্রথম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া, আরেক মুসলিম প্রধান দেশ মালয়েশিয়াতে ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে সৃষ্ট জাকাত সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক স্বায়ত্তশাসিত বিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেসব দেশের গোটা অর্থনীতি জাকাত ব্যবস্থাপনার আওতায়। বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত বোর্ড আস্থাভাজন জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন পর্যায়ে উঠতে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জাকাত প্রদানকারীদের আস্থাভাজন সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্টের মতো একাধিক প্রতিষ্ঠান সরকারের স্বীকৃতিতে (নিবন্ধন ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ/নিরীক্ষাধীনে) গড়ে উঠতে পারে।

শরিয়তসম্মতভাবে পরিচালিত ব্যাংক বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমেও জাকাত উসূলও বণ্টনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতদুদ্দেশ্যে ব্যাংকে একটি করে জাকাত বোর্ড গঠন করা যেতে পারে। ওই বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ব্যাংক জাকাতদানকারী হিসাবে নিসাবদের কাছে হতে জাকাতের অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। নিজ গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট হতেও তাদের অনুমতি সাপেক্ষে জাকাত সংগ্রহ করে জাকাত ফান্ডে জমা করতে পারে। এ ছাড়া জাকাত বোর্ডের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে হক্দারদের মধ্যে তা বণ্টন করতে পারবে। জাকাত আদায় ও বণ্টনে জাকাত আদায়কারী ও প্রাপকদের মধ্যে আগ্রহ দায়িত্ববোধ গড়ে তুলতে সরকার- স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তি কিংবা কোম্পানি প্রদেয় জাকাতের ওপর আয়কর প্রদানে অব্যাহতি দিতে পারে সরকার। এর ফলে (১) জাকাত আদায়ের হিসাবে বা ঘোষণায় পরিমাণ বাড়বে, স্বচ্ছতা আসবে (২) সরকার সোশ্যাল সেফটি নেটের বাজেটে আয়ন ব্যয়নের একটা সুচারু বাস্তবায়নের স্বচ্ছ তথ্য উপাত্ত এবং ফলাবর্তন জানতে পারবে (৩) দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাতের ঐতিহাসিক ভূমিকা অর্থবহ হয়ে উঠবে। এনবিআর সাম্প্রতিককালে দুটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কর অব্যাহতির যে এসআরও জারি করেছে তাতে প্রদেয় দান অনুদানকে বিনিয়োগ (নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত) বিবেচনায় আয়কর আইনের ৭৬ ধারার সংশ্লিষ্টতায় নির্ধারিত পরিমাণ ‘আয়কর রিবেট’ প্রদানের ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। জাকাত কোনো বিনিয়োগ নয়, ঈমানি দায়িত্ব হিসেবে জাকাত প্রাপককে সম্পূর্ণ মালিকানা দিয়ে এটি প্রদেয় হয়। ‘আয়কর রিবেট’ পেতে জাকাতদাতারা নিজেদের কর ফাইলে এ নিঃস্বার্থ দানের হিসাব দেখিয়ে কর দফতরের সাথে দেনদরবারে গেলে তার জাকাত দানের ফরজ দায়িত্ব পালন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। বিষয়টি বাস্তবতার নিরিখে দেখতে হলে এ দান বা অনুদান (যা জাকাত হিসেবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে দেয়া হবে) সেই পরিমাণ আয় বা ব্যয়ের উপর আংশিক হলেও ডবল ট্যাক্সেসনে যাওয়া সমীচীন হবে না। জাকাত হিসেবে প্রদেয় সমুদয় টাকার ওপর কোনো কর আরোপ না করা (অর্থাৎ কর হিসাবায়ন থেকে তা পুরোপুরি বাদ দেয়া), রেয়াত অর্থে কর অব্যাহতি প্রদান করা হলে জাকাতদাতা তার দানের হিসাব আয়কর নথিতে ঘোষণা দিতে নিঃসঙ্কোচবোধ তথা উৎসাহিত হবেন। তার আয়ব্যয় প্রদর্শন স্বব্যাখ্যাত ও স্বচ্ছ হবে, এনবিআরের মাধ্যমে রাষ্ট্র বা অর্থনীতি জানতে পারবে জাকাতের হিসাব-যা বাজেট ব্যবস্থাপনায় যোগ করবে স্বস্তি ও প্রশান্তি। রাজস্ব দফতর হিসাব কষে এটাও বলতে পারবে এ অব্যাহতির ফলে কত টাকার রাজস্ব হাতছাড়া হয়ে গেল। এটা নিশ্চয় সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপকের বিচেনায় আসবে যে এ কর ছাড়ের বিপরীতে জাকাতের অর্থ যথাযথ বিলি বণ্টনের মাধ্যম দারিদ্র্য-বিমোচন বা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের বরাদ্দ ব্যয়ে অবশ্যই বড় ধরনের সাশ্রয় ঘটবে। দারিদ্র্য নিরসন কার্যক্রমকে দারিদ্র্যের সার্বিক ও সমূলে নিরসনের উদ্যোগ প্রয়োজন। ব্যক্তির দারিদ্র্য সমাজের দারিদ্র্যের প্রতিফল হিসেবে দেখতে হবে। সুতরাং সমন্বিতভাবে সংঘবদ্ধ দারিদ্র্য নিরসনের কর্মসূচি প্রয়োজন। জাকাত ব্যবস্থাপনার দ্বারা অর্থনীতিকে বলশালী করার কোনো বিকল্প নেই। সার্বিক দারিদ্র্য নিরসনে প্রয়োজন সমন্বিত প্রয়াস, এমন উদ্যোগ যা নিরাপদ ও কল্যাণপ্রদ অর্থ উৎসারিত এবং স্বয়ম্ভর সক্ষমতা সৃষ্টির দ্যোতক।

লেখক : সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান

(দৈনিক নয়া দিগন্ত, প্রকাশ : সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০০:০০)


Content section image